প্রত্যেক ব্লগারেরই ইচ্ছা থাকে যে, ব্লগে সে যাই লিখুক না কেন, বেশি বেশি মানুষ যেন সেই লেখা পড়ে, তার ব্লগে যেন প্রচুর পরিমাণে ট্রাফিক আসে এবং সেই সাথে তার আয়ও বাড়ে।
কিন্তু প্রশ্ন আসে কোথা থেকে এই ট্রাফিক আসবে? তার উত্তর হল সার্চ ইঞ্জিন । কারণ 90% মানুষ ইন্টারনেটে যেকোনো কিছু খুঁজে পেতে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে। আর তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন হল গুগল।
এখন শুধু কল্পনা করুন যে, আপনি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে কিছু কন্টেন্ট বা বিষয়বস্তু প্রকাশ করেছেন, এবং কেউ যদি একই বিষয়বস্তু সম্পর্কিত তথ্য গুগলে সার্চ করে এবং আপনার ওয়েবসাইটের লিঙ্কটি সার্চ রেজাল্টের শীর্ষে আসে, তাহলে মানুষ এটাতে ক্লিক করবে এবং সেই সাথে আপনার সাইটের ট্রাফিকও বাড়বে।
কিন্তু তারপরেও প্রশ্ন জাগে যে এটা কীভাবে ঘটবে?
এই কাজ করতে দুটি উপায় আছে:
- সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং (SEM)
- সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান (SEO)
যেখানে SEM মানে অর্থপ্রদত্ত বিপণন অর্থাৎ আমরা গুগলকে অর্থ প্রদান করে বিজ্ঞাপন দিতে পারি। কিন্তু এসইও হল এমন একটি উপায়, যেখানে আমরা গুগলকে অর্থ প্রদান না করে অরগ্যানিক উপায়ে ট্রাফিক পেতে পারি।
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সম্পর্কে জানার আগে, সার্চ ইঞ্জিন কি তা জানা গুরুত্বপূর্ণ
সার্চ ইঞ্জিন কি
সার্চ ইঞ্জিন হল এক ধরনের প্রোগ্রাম যা ব্যবহারকারীদের, কীওয়ার্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেটে তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে। যখনই কোন ব্যবহারকারী সার্চ বাক্সে একটি কীওয়ার্ড বা প্রশ্ন টাইপ করে সাবমিট বাটনে ক্লিক করে তখন সার্চ ইঞ্জিন, ব্যবহারকারী কী খুঁজতে চায় তা বোঝার চেষ্টা করে এবং এটি এর অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে ইউজারের সার্চ করা কিওয়ার্ডের সাথে সম্পর্কিত ফলাফল প্রদর্শন করে।
বর্তমান সময়ে গুগল সার্চ ইঞ্জিন সবচেয়ে জনপ্রিয় । আপনি যখন গুগলে কিছু সার্চ করেন, তখন গুগল আপনাকে সেরা ফলাফল দেওয়ার জন্য 200 ফ্যাক্টর ব্যবহার করে ।
গুগলের মতো আরও বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন রয়েছে। যেমন,
Duckduckgo.com
Yahoo.com
Bing.com
Baidu.com
Yandex.com
Ask.com
এসইও কি – SEO কি – সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কি
এসইও এর পূর্ণরূপ হল “সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন” । এটি এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ওয়েবসাইট বা ব্লগের বিষয়বস্তু অপ্টিমাইজ করতে পারি এবং সার্চ ইঞ্জিনে একটি কীওয়ার্ডের জন্য শীর্ষ অবস্থানে র্যাঙ্ক করতে পারি।
একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইটকে গুগলের SERP (সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজ) প্রথম পাতায় আনতে অনেক কিছুর উপর কাজ করতে হয় এবং অনেক পরিশ্রম করতে হয়। একজন নতুন ব্লগারের জন্য, এই প্রক্রিয়াটি একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়, তাই আপনাকে ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি গুগলে যাই এবং যে কোনও কীওয়ার্ড লিখে সার্চ করি, তবে গুগল আপনাকে সেই কীওয়ার্ড সম্পর্কিত সমস্ত বিষয়বস্তু দেখায়। এই সমস্ত বিষয়বস্তু যা আমরা দেখি তা বিভিন্ন ব্লগ থেকে আসে।
আমরা যে ফলাফলটি সার্চ রেজাল্টের শীর্ষে দেখতে পাই তা গুগলে ১ নাম্বার র্যাঙ্কে রয়েছে। নং ১ এর মানে হল যে, সেই ব্লগে SEO খুব ভাল করে করা হয়েছে যাতে এটি আরও ভিজিটর পায় এবং সেই কারণেই সেই ব্লগটি সার্চ রেজাল্টের প্রথমে রয়েছে।
এসইও আমাদের ব্লগকে গুগলে ১ নম্বর র্যাঙ্কে আনতে সাহায্য করে। এটি এমন একটি কৌশল যা সার্চ ইঞ্জিনের সার্চ ফলাফলের শীর্ষে রেখে আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটরের সংখ্যা বাড়ায়।
যদি আপনার ওয়েবসাইট সার্চ রেজাল্টের শীর্ষে থাকে, তাহলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রথমে আপনার সাইটে ভিজিট করবে, যা আপনার সাইটে আরও বেশি ট্রাফিক পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয় এবং আপনার আয়ও ভাল হতে শুরু করে। আপনার ওয়েবসাইটে অরগ্যানিক ট্রাফিক বাড়াতে SEO ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
SEO এর পূর্ণরূপ কি
এসইও এর পূর্ণ রূপ হল ” সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization) “।
গুগলে প্রথম পৃষ্ঠায় র্যাঙ্ক করা কেন গুরুত্বপূর্ণ
প্রতিটি ব্লগার তার ব্লগ পোস্টটি গুগলের প্রথম পৃষ্ঠায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এর কারণ হল বেশিরভাগ ইউজার প্রথম পৃষ্ঠায় আসা ওয়েবসাইটটি দেখতে পছন্দ করে। একটি গবেষণা অনুসারে, প্রায় 94% ক্লিক গুগলের প্রথম পেজে প্রদর্শিত ওয়েবসাইট গুলোতে আসে।
এমন পরিস্থিতিতে, সবাই তাদের ব্লগ বা ওয়েবসাইট SERP-তে প্রথম পৃষ্ঠায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে, যাতে তারা তাদের প্রতিযোগীকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেজন্যই এসইও সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
আরও পড়ুনঃ ২৫০+ হাই DA প্রোফাইল ব্যাকলিংক সাইটের তালিকা
কেন এসইও গুরুত্বপূর্ণ?
আপনি যদি ব্লগিং করেন, তাহলে আপনি অবশ্যই জানেন যে, ইন্টারনেটে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ ব্লগ পোস্ট প্রকাশিত হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র কয়েকটি সার্চ ইঞ্জিনে শীর্ষে স্থান পেতে সক্ষম হয়।
কারণ গুগলের মতো সব সার্চ ইঞ্জিনের অ্যালগরিদম, র্যাঙ্কিংয়ের আগে অনেক কিছু পরীক্ষা করে এবং তারপরই সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোন পোস্টটি কোন কীওয়ার্ডের উপর র্যাঙ্ক করবে এবং কোন অবস্থানে আসবে।
Google এর সর্বদা প্রচেষ্টা থাকে যে, সার্চ রেজাল্টের প্রথম পাতায় যেন মানসম্পন্ন সামগ্রী প্রদর্শিত হয়। এর জন্য অনেকগুলি র্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর অর্থাৎ নিয়ম সেট করা হয়েছে। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে, আমরা এই নিয়মগুলি অনুসরণ করতে সক্ষম।
ধরুন আপনি একটি পোস্ট লিখছেন যার শিরোনাম “সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কি?” এখন আপনি Google এ অনুসন্ধান করে এটি খুঁজে পেতে পারেন…
আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে সেই কীওয়ার্ড সম্পর্কিত তথ্য ইতিমধ্যেই 348,000 ব্লগে উপস্থিত রয়েছে। এখন এই সব পিছনে ফেলে, আপনি যদি শীর্ষে আসতে চান তবে এসইও ছাড়া এই কাজটি সম্ভব নয়।
তবে আপনি এমন কিওয়ার্ডের উপর আর্টিকেল লিখতে পারেন যার উপর কোন প্রতিযোগিতা নেই। কিন্তু আপনার আর্টিকেল যদি এসইও অপটিমাইজড না হয়, তাহলে কালকে অন্য কেউ একই বিষয়ে পোস্ট লিখে আপনাকে ছাড়িয়ে যাবে। সেজন্য এসইও কি তা জানা এবং এসইও কৌশল ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এসইও কিভাবে কাজ করে
আপনি এসইও কি এবং এর প্রাথমিক তথ্য জেনে গেছেন। এখন আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, এসইও কিভাবে কাজ করে? তাই এটা বোঝার জন্য আমাদের জানতে হবে যে, সার্চ ইঞ্জিন তার প্রথম পেজে কী ধরনের সামগ্রী দেখায়?
প্রকৃতপক্ষে, গুগল সহ সব সার্চ ইঞ্জিন তাদের ব্যবহারকারীদের সবচেয়ে তথ্যবহুল এবং সঠিক বা নির্ভুল তথ্য প্রদান করার চেষ্টা করে থাকে।
এর জন্য, এটি সেই তথ্য সম্পর্কিত ওয়েবসাইটগুলি অনুসন্ধান করে এবং এর অ্যালগরিদমের মাধ্যমে গুণমান এবং বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে সেগুলোর র্যাঙ্কিং প্রদান করে।
এসইও কৌশলের মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনের কাছে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের গুণমান এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে পারি।
ধরুন, আপনি আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটে “বিটকয়েন ইনকাম” সম্পর্কিত একটি কন্টেন্ট পাবলিশ করলেন। তারমানে এই নয় যে, কেউ গুগলে গিয়ে “ বিটকয়েন ইনকাম ” লিখে সার্চ করলেই আপনার ওয়েবসাইটকে প্রথম পেজে দেখাবে। প্রথম পেজে শো করার জন্য আপনাকে Proper ভাবে SEO করতে হবে।
আবার, ধরুন আপনি আপনার সাইটের কোনো কন্টেন্টের জন্য প্রোপার এসইও করলেন। কিন্তু তারমানে এই নয় যে, এসইও কমপ্লিট করার সাথে সাথেই সেই কন্টেন্টটি গুগলের টপ পজিশনে প্রদর্শিত হবে। আপনি কোন কন্টেন্টের এসইও করেছেন, তার অর্থ হল আপনি সার্চ ইঞ্জিনকে একটি পজেটিভ সিগন্যাল প্রদান করছেন।
এসইও এর মূল উদ্দেশ্য হলো, আপনি সার্চ ইঞ্জিনকে এটি বোঝাতে চাচ্ছেন যে, আপনার ব্লগের কন্টেন্টে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশন রয়েছে যা সবার জানা দরকার।
ধরুন, আপনার ব্লগের কোনো কন্টেন্ট গুগল ২য় পেজে শো করলো। এখন আপনার টার্গেট হবে সেই কন্টেন্ট কে গুগলের প্রথম পেজে নিয়ে আসা ৷ আর আপনার এই কন্টেন্ট কে প্রথম পেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য কন্টেন্টকে সঠিক উপায়ে অপটিমাইজ করতে হবে।
আপনার কন্টেন্টকে যদি গুগলের ২য় পেজেও শো করে, এর অর্থ হল গুগল ক্রলার কিছুটা হলেও বুঝতে পেরেছে যে, আপনি কোন টপিকের উপর কন্টেন্ট পাবলিশ করেছেন। এখন কন্টেন্ট পাবলিশ করার পর পুনরায় আপনাকে সেই কন্টেন্ট অপটিমাইজ করতে হবে, যার ফলে গুগল ক্রলার আপনার কন্টেন্ট আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
এভাবে আপনি যতো এসইও টেকনিক প্রয়োগ করবেন। গুগল ক্রলারও ঠিক ততোটাই আপনার কন্টেন্টের ভেতরে থাকা বিষয়বস্তু বুঝতে পারবে।
এবার ধরে নিলাম যে আপনি আপনার কন্টেন্টকে প্রোপার ভাবে অপটিমাইজ করে ফেলেছেন। এখন যদি কেউ ” বিটকয়েন ইনকাম” লিখে গুগলে সার্চ বা অনুসন্ধান করে। তখন গুগল স্পাইডার তার ডেটাবেসে “বিটকয়েন ইনকাম” নিয়ে কোনো ইনফরমেশন ইনডেক্স করা আছে কিনা সেটি খুজে বের করার চেষ্টা করবে।
এখন আপনি যদি প্রোপার ভাবে এসইও করার মাধ্যমে গুগল ক্রলারকে বোঝাতে পারেন যে, আপনার কন্টেন্টটি “বিটকয়েন ইনকাম” সম্পর্কে লেখা ৷ সেক্ষেত্রে গুগল স্পাইডার অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগের কন্টেন্টকে সার্চ রেজাল্টের টপ পজিশনে দেখাবে।
তবে সব সময় মনে রাখবেন যে, এসইও হলো ধীরগতি সম্পন্ন একটি কাজ। তাই এইখানে কাজ করার সাথে সাথে কাজের রেজাল্ট আশা করাটা বোকামি।
এসইও কত প্রকার
সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন প্রধানত 2 প্রকার :
- On-Page SEO
- Off-Page SEO
অন-পেজ এসইও কি?
অন-পেজ এসইও-তে, আমরা আমাদের ওয়েবসাইট বা ব্লগের বিষয়বস্তু অপ্টিমাইজ করি। এটি একটি সাধারণ উপায় যা আমরা আমাদের ব্লগ পোস্টগুলিকে অপ্টিমাইজ করি৷
অন পেজ এসইও এর কাজ সাধারনত আপনার ব্লগে করা হয়। এর অর্থ হল আপনার ওয়েবসাইটটি সঠিকভাবে ডিজাইন করা যা SEO বন্ধুত্বপূর্ণ।
এসইও নিয়ম অনুসরণ করে আপনার ওয়েবসাইটের টেমপ্লেট ব্যবহার করুন। ভালো কন্টেন্ট লেখা এবং সেগুলোতে ভালো কীওয়ার্ড ব্যবহার করা যা সার্চ ইঞ্জিনে সবচেয়ে বেশি সার্চ করা হয়।
টাইটেল, মেটা ডেসক্রিপশনের মতো পেজের সঠিক জায়গায় কীওয়ার্ড ব্যবহার করা । বিষয়বস্তুতে কীওয়ার্ড ব্যবহার করলে আপনার বিষয়বস্তু কার ওপর লেখা আছে তা গুগলের কাছে সহজে বোধগম্য হয় এবং আপনার ওয়েবসাইটকে গুগল পেজে দ্রুত র্যাঙ্ক করতে সাহায্য করে। যার কারণে আপনার ব্লগে ট্রাফিক বৃদ্ধি পায়।
অন পেজ এসইও এর অনেক ফ্যাক্টর আছে, যার সাহায্যে আপনি আপনার ওয়েবসাইটটিকে অন পেজের জন্য অপ্টিমাইজ করতে পারেন, আমরা আপনাকে কিছু সাধারণ বিষয় বলতে যাচ্ছি।
- ওয়েবসাইট ডিজাইন
- ওয়েবসাইটের গতি
- ওয়েবসাইট স্ট্রাকচার
- ওয়েবসাইট ফেভিকন
- মোবাইল-বান্ধব ওয়েবসাইট
- শিরোনাম ট্যাগ
- মেটা ডেসক্রিপশন
- কীওয়ার্ডের ঘনত্ব
- ছবি Alt ট্যাগ
- URL গঠন
- ইন্টারনাল লিঙ্কিং
- গুরুত্বপূর্ণ কীওয়ার্ড হাইলাইট
- হেডিং ট্যাগ ব্যবহার
- পোস্ট-ভাল দৈর্ঘ্য
- গুগল সাইটম্যাপ
- ব্রোকেন লিঙ্ক চেক করুন
- SEO ফ্রেন্ডলী URL
- গুগল অ্যানালিটিক্স
- সোশ্যাল মিডিয়া বাটন
- HTML পৃষ্ঠার আকার
- পেজ ক্যাশ ক্লিয়ার করা
- ওয়েবসাইট নিরাপত্তা HTTPS ইত্যাদি
অফ-পেজ এসইও কি
নাম অনুসারে, এতে আমরা এমন কিছু এসইও কৌশল ব্যবহার করি যা আমাদের ওয়েবসাইটের র্যাঙ্কিং বাড়াতে বাইরে থেকে কাজ করে। অর্থাৎ অফ-পেজ এসইওতে আমাদের ওয়েবসাইটের ভিতরে কোন পরিবর্তন করতে হবে না।
সোজা ভাষায় বলতে গেলে অফ পেজ এসইও-তে আমাদের ব্লগের প্রচার করতে হয়। যেমন অনেক জনপ্রিয় ব্লগে গিয়ে তাদের আর্টিকেলে মন্তব্য করতে হয় এবং আমাদের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক জমা দিতে হয়, একে আমরা ব্যাকলিংক বলি। ওয়েবসাইটটি ব্যাকলিংক থেকে অনেক উপকৃত হয়।
Facebook, Twitter, Quora-এর মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আপনার ওয়েবসাইটের একটি আকর্ষণীয় পেজ তৈরি করুন এবং আপনার ফলোয়ার বাড়ান, এতে আপনার ওয়েবসাইটে আরও ভিজিটর বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বড় ব্লগ, যেগুলো খুবই জনপ্রিয়, তাদের ব্লগে গেস্ট পোস্ট সাবমিট করুন। এর ফলে তাদের ব্লগে আসা ভিজিটররা আপনার ব্লগ সম্পর্কে জানতে শুরু করবে এবং সেই সাথে আপনার ওয়েবসাইটে ট্রাফিক আসতে শুরু করবে।
অফ পেজ এসইও করার অনেক উপায় আছে। যার সাহায্যে আপনি আপনার পোস্টের র্যাঙ্কিং বাড়িয়ে আপনার ওয়েবসাইটের ট্রাফিক বাড়াতে পারেন।ন
১. সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট
২. সামাজিক বুকমার্কিং সাইট
- টাম্বলার
- Diggo
- Digg
- Stumbleupon
৩. গেস্ট পোস্টিং
৪. ফোরাম পোস্টিং
৫. ব্লগ কমেন্ট
৬. ব্লগ ডিরেক্টরি সাবমিট
৭. সার্চ ইঞ্জিন সাবমিট
৮. Classifieds Submission Site
৯. ভিডিও শেয়ারিং সাইট
১০. ফটো শেয়ারিং সাইট
১১. প্রশ্ন এবং উত্তর সাইট
নোটঃ ব্যাকলিংক তৈরি করার সময় আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে, আমরা যে সাইটে লিঙ্ক তৈরি করছি তার মানও যেন ভালো হয়, অন্যথায় এর নেতিবাচক প্রভাব আপনার ব্লগের উপর পড়তে পারে।
এছাড়াও দুই ধরনের এসইও টেকনিক রয়েছে । যেটা বোঝা বা জানা আপনার জন্য খুবই জরুরী। আপনি যদি সেগুলি বুঝতে না পারেন তবে ট্রাফিক বাড়ানোর পরিবর্তে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের ক্ষতি করবেন।
- White hat seo
- Black hat seo
White hat seo
আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ন্যাচারাল উপায়ে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান এবং লিঙ্ক বিল্ডিং করবেন, তখন একে হোয়াইট হ্যাট এসইও বলা হয় । সেরা ব্লগ এবং ব্লগাররা এই কৌশলটি ব্যবহার করেন। এটি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য খুব ভাল। এতে করে ওয়েবসাইটের মান বাড়ার সাথে সাথে সাইটের ট্রাফিকও বাড়ে।
এসইও এর যতো ধরনের টেকনিক রয়েছে, তার মধ্যেও সবচেয়ে Safe এবং legal টেকনিক হলো হোয়াইট হ্যাট এসইও। আর আপনি যদি হোয়াইট হ্যাটের সবগুলো টেকনিক সম্পর্কে জানতে পারেন তাহলে আপনি নিজেকে একজন SEO Expert হিসেবে দাবী করতে পারবেন।
Black hat seo
গুগলে কোনো ওয়েবসাইটকে দ্রুত র্যাঙ্ক করানোর জন্য যখন সার্চ ইঞ্জিনের নির্দেশিকা অনুসরণ করা হয় না, তখন একে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও বলা হয় । এর ব্যবহার ওয়েবসাইটে খারাপ প্রভাব ফেলে। আরও সহজ ভাবে বলতে গেলে যখন আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগে ভিজিটর নিয়ে আসার জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা হয় তখন তাকে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও।
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও এর মাধ্যমে আপনি আপনার সাইট দ্রুত র্যাঙ্কিং এ নিয়ে আসতে পারবেন। যদি আপনারা ব্ল্যাক হ্যাট টেকনিক এর মাধ্যমে আপনার সাইটে ভিজিটর আনতে চান তাহলে নিচের কাজগুলো করুন –
- কিওয়ার্ড স্টাফিং
- ক্লিকবেট টাইটেল
- আনলিমিটেড ব্যাকলিংক
Black hat Seo এর সব টেকনিক মূলত গুগলকে বোকা বানানোর টেকনিক। Black Hat Seo এর দ্বারা সার্চ ইঞ্জিনকে একপ্রকার ফোর্স করা হয় যেন সে আপনার ব্লগকে র্যাঙ্কিং এ নিয়ে আসে।
একটা বিষয় মনে রাখবেন, আপনি যতোদিন এই SEO সেক্টরে বা ব্লগ নিয়ে কাজ করবেন ৷ ততোদিন কোন পরিস্থিতিতেই কোনো সার্চ ইঞ্জিনকে বোকা বানানোর চেষ্টা করবেন না ৷ কারণ এই Black hat টেকনিক ফলো করে আপনি কিছুদিনের জন্য গুগল থেকে ভিজিটর আপনার সাইটে নিয়ে আসতে পারবেন, এটা সত্যি।
তবে একটা সময় গুগল বা অন্য যে কোন সার্চ ইঞ্জিন ঠিকই বুঝতে পারবে যে, আপনি আসলে তাদেরকে ঠকানোর জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেছেন ৷ এরপর তারা আপনার ব্লগ বা ওয়েবসাইটকে তাদের সার্চ এলগরিদম থেকে পেনাল্টি দিয়ে দিবে। আর একবার যদি আপনার সাইটকে তারা পেনাল্টি দেয় তাহলে আপনার সাইট আর কখনই সার্চ রেজাল্টে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আরও পড়ুনঃ কীভাবে আপনার ব্লগ Google এ র্যাঙ্ক করবেন
এসইও এর ব্যাসিক টার্মস
আপনার যদি একটি ব্লগ বা ওয়েবসাইট থাকে, তাহলে আপনি বেসিক এসইও সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন, এটি কীভাবে কাজ করে। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বেসিক এসইও টার্মস সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখেন না। নিচে কিছু ব্যাসিক এসইও টার্ম দেওয়া হল –
- Backlink
- PageRank
- Anchor text
- Title Tag
- Meta Tags
- Search Algorithm
- SERP
- Keyword Density
- Keyword Stuffing
- Robots.txt
এসইও টুলস (Tools)
SEO করার সময় অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। যদি আপনারা সেই কাজগুলো ম্যানুয়ালি করতে চান, তাহলে অনেক সময়ের প্রয়োজন হবে। আপনাদের ম্যানুয়ালি যে কাজ করতে ১ দিন লাগবে ঠিক সেই কাজ Tools দিয়ে করলে কয়েক মিনিটেই করে ফেলতে পারবেন।
অনলাইনে SEO করার জন্য দুই ধরনের টুলস রয়েছে –
- পেইড টুলস (Paid Tools)
- ফ্রী টুলস (Free Tools)
আপনাদের যদি সামর্থ্য থাকে, তাহলে আপনারা পেইড টুলস ইউজ করতে পারেন ৷ আর যদি আপনাদের সেই সুযোগ না থাকে, তাহলে আপনারা Free Tools এর মাধ্যমে এসইও করতে পারেন ।
এসইও করার পেইড টুলসের তালিকা
বর্তমানে অনেক ধরনের Paid Tools রয়েছে যে গুলোর মাধ্যমে আপনার এসইও রিলেটেড কাজ গুলো খুব সহজে এবং কম সময়ে করে ফেলতে পারবেন। এমন কিছু পেইড টুলসের নাম নিচে দেওয়া হলো –
- Ahrefs
- SEMrush
- SEO Spider
- Moz Pro
- KWFinder
- Searchmetrics
- Yoast SEO
এই টুলস গুলো ইউজ করতে হলে আপনাদের মাসিক অথবা বাৎসরিক কিছু পরিমান টাকা দিতে হবে ৷ তবে আপনারা যারা এসইও তে নতুন, তারা এই টুলসগুলো কয়েকজন মিলে কিনে তারপর ব্যবহার করতে পারেন।
এসইও করার ফ্রি টুলসের তালিকা
যদি আপনি নতুন ব্লগ তৈরি করে থাকেন বা নতুন এসইও শেখা শুরু করে থাকেন অথবা যদি আপনার পেইড Tools ব্যবহার করার মতো ক্ষমতা না থাকে। তাহলে আপনি এসইও করার জন্য Free Tools গুলো ব্যবহার করতে পারেন। কারন এই সব ফ্রী টুলসের মাধ্যমে আপনারা এসইও রিলেটেড অনেক কাজ করতে পারবেন।
নিচে কিছু ফ্রি এসইও টুলসের নাম দেওয়া হলোঃ
- Google Analytics
- Google Trands
- Keyword Hero
- Screaming Frog
- SEOlyzer
- Answer The Public
- Keyword Planner
- Search Console
- Keyword Surfer
- Ubersuggest
এগুলো ছাড়াও এসইও করার জন্য আরও অনেক ফ্রি টুলস আছে। আপনি চাইলে গুগলে সার্চ করে সেগুলো ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারেন৷
এসইও করে আয়
যদি আপনি একজন এসইও এক্সপার্ট হয়ে থাকেন। তাহলে আপনি এসইও এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। বর্তমানে অনেকেই এসইও এর মাধ্যমে ভাল পরিমাণ টাকা ইনকাম করছে। ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলতেও বর্তমানে এসইও সার্ভিস প্রোভাইডারদের অনেক ডিমান্ড রয়েছে। নিচের পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে আপনিও এসইও করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
ব্লগ /ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম
যদি আপনার এসইও ভাল ভাবে জানা থাকে, তাহলে আপনি আপনার ব্লগে বিভিন্ন ধরনের কন্টেন্ট পাবলিশ করে গুগল এডসেন্স বা এডসেন্সের মতো অন্যান্য Ad Network থেকে ভাল পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
এছাড়াও বর্তমানে ই-কমার্সের চাহিদা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে, আপনিও একটা ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে প্রোডাক্ট সেল করে ভাল পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
ফ্রীল্যান্সিং করে ইনকাম
সময়ের সাথে সাথে ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিন অনেক নতুন নতুন ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি হচ্ছে। কিন্তুু সমস্যা হলো, যারা এই ব্লগ বা ওয়েবসাইট গুলো তৈরি করছে তাদের বেশীরভাগই এসইও করতে পারেনা। আবার এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা তাদের ব্লগের এসইও করার জন্য সময় দিতে পারেন না। আর আপনারা তো জানেনই যে, এসইও ছাড়া কোনো ওয়েবসাইট কে গুগলে র্যাঙ্ক করানো সম্ভম নয় ৷
এমন অবস্থায় আপনি যদি এসইও সম্পর্কে ভাল জানেন অর্থাৎ আপনি যদি একজন এসইও এক্সপার্ট হয়ে থাকেন। তাহলে এইসব নতুন ওয়েবসাইট বা ব্লগ গুলোতে এসইও সার্ভিস দিয়ে ভাল পরিমাণ টাকা ইনকাম করতে পারবেন৷
কোর্স সেল করে ইনকাম
এমন অনেকেই আছেন, যারা এসইও সেক্টরে একদম নতুন। যারা এই নতুন অবস্থায় আছেন, তাদের মধ্যে অনেকেই অনলাইনে কোর্স কিনে এসইও কীভাবে করতে হয় তা শিখতে চায়।
আপনি এই ধরনের মানুষ গুলোকে টার্গেট করে আপনার কোর্স সেল করে বেশ ভালো পরিমান টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
শেষ কথা
আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন SEO কি। আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে বা আপনি একজন ব্লগার হন এবং যদি আপনি আপনার সাইটে সার্চ ইঞ্জিন থেকে বিনামূল্যে ট্রাফিক পেতে চান তাহলে আপনাকে এসইও শিখতে হবে । আজকাল বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের ওয়েবসাইটের সার্চ র্যাঙ্কিং বাড়াতে এসইও এক্সপার্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং-এ প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকে।
আর্টিকেলটি নিয়ে যে কোন ধরনের প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানান।
ধন্যবাদ ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন