১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল। 

১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল


ভূমিকা: ১৯৭০ সালের নির্বাচন বাঙালি জাতির কাছে এক অনন্য স্মৃতি। পাকিস্তানী বাহিনীকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এই নির্বাচন অনেক মূল্যবান ভূমিকা রাখে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার আদায় করা হয়। আজকে আমরা জানবো  ৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল ও ১৯৭০ সালের নির্বাচন পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে। 


১৯৭০ সালের নির্বাচন। 

 ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খান যখন পদত্যাগ এর ঘোষণা দেন। তখন ২৮ মার্চ সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। কিন্তু এর আগে বহুবার পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিল। পরে তারা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রকম তামাশা করেছে। তাই এই নির্বাচন নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অনেক আশঙ্কায় ছিল। কারণ নির্বাচনের কোনো নিয়ম-কানুন ছিল না। কিন্তু এরকম বিভ্রান্ত বিষয়কে উৎক্ষেপণ করে, অবশেষে 7 ডিসেম্বর সর্ব প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

১৯৭০ সালের নির্বাচনের আওয়ামী লীগ, মুসলিম লীগ, পাকিস্তান পিপলস পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ইত্যাদি দল অংশগ্রহণ করে। এককথায় বলা যায় একটা জাতীয় নির্বাচনের পর যায় ভোটের অধিকার তৈরি হয়েছে। এরপরে সকল রাজনৈতিক দলগুলো একটা বৈঠক অনুষ্ঠিত করে। এই বৈঠকে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে মোট ছয় দফায় চিহ্নিত করে গণভোট অনুষ্ঠিত করে। এই নির্বাচনে মোট ভোট ছিল প্রায় পাঁচ কোটির উপরে। পাকিস্তানি ছিল তিন কোটির বেশি। 

১৯৭০ সালের নির্বাচনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারই নেতৃত্বে আওয়ামী লীগও এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই নির্বাচনকে গণভোটে অভিহিত করে গেছেন। কারণ এই ভোট অধিকার যদি জনগণের না হতো, তাহলে পাকিস্তান পাকবাহিনী এখানেও দুর্নীতি করে ক্ষমতায় আসতে। 

পাকিস্তানি বাহিনীর সব সময় ক্ষমতা দখলের বিভিন্ন সুযোগ খুজত। এই নির্বাচনে নীল নকশা আঁকা হয়েছিল। কিন্তু জনগণ যখন এই দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে পারে। তখন তারা আর থেমে থাকে না। কারণ তারা দীর্ঘ অনেক বছর পাকিস্তানের শোষণ ও শাসনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছিল। জনগণ বুঝতে পেরেছিল, এই নির্বাচনী বছরে পাকিস্তানি বাহিনী ক্ষমতায় যায়, তাহলে আবারও পূর্ব পাকিস্তানের অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হতো। 

১৯৭০ সালের নির্বাচনের পিছনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে যার তার নাম শেখ মুজিব। তিনি খুব দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর একটা গণভোটের অধিকার তৈরি করেছিলেন। যার মাধ্যমে মোট 5 কোটি জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। যার অধিকাংশ প্রায় আমাদের বাংলাদেশে অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ছিল। কারণ জনগণ তখন পাকিস্তানের শোষণ ও শাসন থেকে মুক্তি চাই তো। তাই তারা এই নির্বাচনে ব্যাপক ভাবে অংশগ্রহণ করে। শুধু অংশগ্রহন করেনা, তারা তাদের প্রত্যেকটা ভোট গণতন্ত্র রূপান্তর করে। 


১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল।

১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের সূচনা ঘটে। নির্বাচনে ৬টি দল অংশগ্রহণ করে। যার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন হয় আওয়ামী লীগের মধ্যে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল নিম্নরূপ:-

১৯৭০ সালের নির্বাচনে মোট 300 টি আসন নির্ধারিত করা হয়। 300 টি আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের 162 টি আসন থাকে। ১৬২ টি আসনের মধ্যে 160 টি আসনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। সংরক্ষিত মহিলা আসনের মধ্যে সাতটি আওয়ামী লীগ অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে 300 আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৯৮ আসল পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান সরকার গঠন করে। 


১৯৭০ সালের নির্বাচনে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ নজর বিহীন বিজয় লাভ করে। তাহলে তাদের ছয় দফার প্রতি জনগণের সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক বিজয় করতে থাকে। অপরদিকে পাকিস্তান সরকার ও সমর্থকদের কাছে ছিল একটা বিরাট পরাজয়। তারা বাঙ্গালীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। কারণ তারা বুঝতে পারে তাদের পরাজয় প্রথম শুরু হয়েছে। আরেকটি কারণ হলো তারা বাঙালির উপর আর কোন প্রকার অত্যাচার করতে পারবে না। 

এই নির্বাচনের ফলে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। বাংলা গান ফিরে পায় তাদের মৌলিক অধিকার ও ভোটাধিকার। এই নির্বাচনকে বাঙালি তাতেও পাতের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রাকে পুনরুত্থান করেন। বাঙালিরা মৌলিক অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার পায়। 


উপসংহার

১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকার অর্জিত হয়। যার মাধ্যমে তারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলকে ভোট দেয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী সবথেকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ 300 আসনের মধ্যে মোট 298 টি আসন পেয়ে জয়লাভ করে। রাষ্ট্রের অভ্যুদয় এর পিছনে এই নির্বাচনেও অপরিসীম গুরুত্ব। 



Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন